top of page

Lineman golpo

  • Writer: Tammy
    Tammy
  • Nov 9, 2018
  • 4 min read

Akta Apu likheychen: 

Story ta nice. So sharing this with all of you. 

আমার চাকরিটা আসলে আমি নিজেই নিজেকে দিয়েছি। আসলে চাকরিটা খারাপ না। কোন অফিস নাই, বস নাই, কর্মচারীও নাই৷ আমি একাই চাকরি করি। এই কাজের প্ল্যানটা আমার দীর্ঘদিনের। স্কুলে পড়ার সময় থেকে আমার তীব্র আগ্রহ লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দেয়া। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল এগুলা হাতে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁডিয়ে থাকতে পারি,কিন্তু স্কুলে যেতে আমার ভালো লাগেনা। একটু বড় হয়ে বুঝতে পারলাম, মানুষ লাইনে দাঁড়াতে পছন্দ করেনা। প্রথমে, আমি আমার বন্ধুদের বাসার বিল যা বন্ধুর ঘাড়ে চাপানো হয়েছিল সেগুলো দিতাম, ৫-১০ টাকার বিনিময়ে। একসময় আমার পরিচিতি বেড়ে যায় এবং কলেজের প্রায় ৩০/৪০ জনের বিল আমি দিয়ে দিতাম। মাসে বিভিন্ন বিল বাবদ আমার প্রায় হাজার বা পনেরশো টাকা জমে যেত। সেই থেকে আমার প্ল্যান চাকরি বাকরি না জুটলে আমি এই কাজে ঢুকে পড়ব। কিন্তু মা বাবা ব্যাপারটা জানলে খুব কষ্ট পাবে।সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে মৌরী। মৌরী আমার গার্লফ্রেন্ড, এবার বিসিএস দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে জয়েন করেছে। পোস্টিং দিয়েছে রাংগামাটি৷ তাকে বলেছি আমার একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে,পোস্টিং ঢাকাতেই।সে খুব খুশি, সে বাসায় বলেছে আমাদের বিয়ের কথা আমিও বাবাকে বলেছি, আমরা শীঘ্রই বিয়ে করব। স্বনামধন্য এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর প্রায় চার বছর চাকরি চাকরি করে লেগে থেকেও যখন কোন কিছু হচ্ছিলনা।তখন নিজেকে লাইনম্যান ঘোষণা দিয়ে দিলাম। আমি যে কোন ধরণের লাইনে দাঁড়াতে পারি। যে ধরনের কাজ আমি সাধারণত করি তার একটা বর্ণনা দিয়ে আমি লিফলেট বানালাম। লাইনম্যান! লাইনম্যান!! লাইনম্যান!!! আর নয় লাইনে দাঁড়ানোর বিরক্তি।যে কোন ধরনের লাইনে দাঁড়াতে পারদর্শী। সুষ্ঠু ও নিয়ম মেনে লাইনে দাঁড়ানো হয়। এবার বাঁচবে সময়। যে ধরনের লাইন ধরা হয়। ১. বিদ্যুৎ বিল -- প্রতিমাস ৫০ টাকা। ১ বছরের প্যাকেজে ৫৫০ টাকা। ২.গ্যাস বিল - same ৩.ডাক্তারের সিরিয়াল- ভিজিটের ১০% ৪. বাসের টিকিট - টিকিটের ২০% ৫. ট্রেণের টিকিট - টিকিটের ২০% ৬. ব্যাংকে টাকা জমা দেয়া বা উঠানো - ৫০ টাকা ৭. বিশ্বকাপের টিকিট - ২০০ টাকা পার টিকিট ৮. অন্যান্য- ক.বাজার আনা নেয়া। ঘরে ঢুকে ফ্রিজে সাজিয়ে রাখা পর্যন্ত। মাসিক ১০০০ টাকা খ. বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেয়া, টিফিন খেয়েছে কিনা চেক করা। -- মাসিক ১০০০টাকা(ভাড়া বাদে) গ. দুষ্টু বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো।হাড়ি পাতিল খেলি, ঘোড়া সাজি, বন্দুক ও ধ্বংসাত্মক খেলা থেকে বিরত রাখি।-- মাসিক ২০০০ টাকা ঘ. কারো প্রতি সন্দেহ থাকলে নজর রাখি (যেমন স্বামী বা স্ত্রী)(ভিডিও সহ)-- চুক্তি সাপেক্ষে। নামঃ শওকত ওসমান বি.এস. সি ( EEE) কন্ট্যাক্ট নাম্বার- ০১********* স্মার্ট এন আই ডি কার্ড আছে। কপি আর ছবি দিব। ১০০% নিরাপদ। আমার কোন খারাপ রেকর্ড নাই।আমি পুলিশ ভেরিফিকেশন করা। কপি আছে। এই লিফলেট আমার এলাকা বাদে আশেপাশের এলাকায় লাগিয়ে দেয়ার দিন থেকেই ক্লায়েন্টের ফোনে ভেসে যাচ্ছি। সকাল ৭ টায় শার্ট প্যান্ট টাই পড়ে বের হই।মা তাড়াহুড়ো করে নাস্তা বানিয়ে খাওয়ান, খুশিতে ঝলমল করে মায়ের মুখ। আর হ্যা আমার একটা স্যুটকেস আছে,সেটাতে থাকে কাপড়ের তৈরী স্পেশাল ফোল্ডিং চেয়ার। মাঝে মাঝে কিছু প্রব্লেম হয়। যেমন একদিন কমলাপুরে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আসলে বসেছি। বসে বসে পত্রিকা পড়ছি। হঠাৎ দেখি মৌরী।সে অবাক হয়ে বলল, " শওকত তুমি এখানে বসে আছ কেন? এটা না লাইন?" আমি তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিলাম। " আরে মৌরী, তুমি এখানে? তোমার না আরো একঘন্টা আগে ট্রেণ ছাড়ার কথা?" সে এসেছিল ছুটিতে বাসায়। আজকে ফেরার কথা, সকালে যখন সে আমাকে বলেছিল কমলাপুরে নিয়ে যেতে আমি তাকে অফিসের দোহাই দিয়েছিলাম। আসলে আমি তখন দুইটা বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম। "হ্যা ট্রেন লেইট, তুমি না অফিসে?". " আর বইলোনা৷ বস যাবে সিলেট। আমাকে পাঠাইছে টিকেট কাটতে" "ও আচ্ছা" "আমিও দৌড়ে দৌড়ে আসলাম, যদি তোমার সাথে দেখা হয়।কিন্তু আমি ভাবছি ট্রেন চলে গেছে" মৌরী কেক আর পাউরুটি কলা কিনেছিল৷ সেগুলো অর্ধেক করে আমাকে দিয়ে গেলো। মেয়েটার সাথে মিথ্যা বলতে আমার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হয়ে লাইনে দাঁড়াই এটাই বা কিভাবে বলব? তবে একদিন ধরা খেয়ে গেলাম।আব্বার সাথে দেখা হয়ে গেলো। এক আন্টির বাজার নিয়ে উপরে যাচ্ছি। তিন তলার সিড়িতে আব্বার সাথে দেখা। আব্বা এসেছিলেন বন্ধুর বাসায়। আর মর তো মর ওই বন্ধুর বাসায়ই বাজার নিয়ে যাচ্ছি আমি। আমি বাবাকে যতই বোঝাই বাবা ততই বলে " তাই তুই মাইনষের বাড়িতে কাজ করবি? তুই আমারে বলতি, আমি জমিজমা বেইচ্চা সিংগাপুর পাঠাইয়া দিতাম" " বাবা, আমি আপনাদের রেখে কোথাও যাবনা৷ আপনাদের কে দেখবে এই বয়সে? আর ওইটা কি খারাপ কাজ নাকি?" " না খারাপ কাজ না, বাসাবাড়িতে কাজ করা খারাপ না? তুই না ইঞ্জিনিয়ার? " বাবাকে বোঝানো গেলোনা। আমি এখন চাকরি করলে বেতন পাইতাম ১২ হাজার কি ১৫ হাজার। সেখানে এখন আমার কামাই মাসিক ৪০-৫০ হাজার।সামনেই আমার অফিস খোলার কথা,অনেক ক্লায়েন্ট হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ছোটবোন শিখাকে চাকরি দিব ভাবতেছি। তাকে বাচ্চা কাচ্চা সাইড টা ধরিয়ে দিব ।ভাবছেন লোকে অসম্মান করবে কিনা? বাংলাদেশের মানুষ পোশাকে বিশ্বাসী, আমি ফিটফাট হয়ে কাজ করি,তাই আমাকে সবাই শওকত সাহেব ডাকে।একইকাজ অন্য কেউ করলে বলতো" ওই ছেড়া" শিখা এবার ইন্টার পাস করেছে। সময় নষ্ট করার দরকার কি? যে দেশ,সেই বেশ। বাবা খুব ঝামেলা শুরু করলেন। শিখা কে তো দিবেনই না। উলটা মৌরীকে ফোন দিয়ে সব বলে দিলেন।বাবার ধারণা মৌরীই পারবে আমাকে বাঁচাতে।মৌরী জানালো আজ রাতের ট্রেণেই সে আসবে। আমি টেনশনে সারাদিনের নানা কাজে মন বসাতে পারলাম না। রাত আটটায় মৌরী ফোন দিল। সে ঢাকায় পৌঁছেছে৷ আমি যেন তাকে রেলস্টেশন থেকে পিক করি। রিকশায় বসে আছি দুইজন।কেউ কিছু বলছিনা। কমলাপুর টু ধানমন্ডি। অনেকটা পথ। মৌরীই বলল, "তুমি নাকি ছুটা বুয়ার কাজ নিছ?" "না তো,আব্বা বাড়ায়া বাড়ায়া বলে, এই দেখো আমার লিফলেট, আমি লাইনে দাঁড়াই" "হুম দেখলাম" "তুমি কি ব্যাপারটা নিয়ে কষ্টে আছো শওকত? " "একটু, তুমি, আম্মা, আব্বা কষ্ট পাচ্ছো,এজন্যে কষ্টে আছি৷ তোমাদের মিথ্যা বলেছি এজন্য কষ্টে আছি!" "কেন কষ্ট পাচ্ছো? ঘুষ খাচ্ছ? দুর্নীতি করছ? খুন করছ? ডাকাতি করছ? চুরি করছ? প্রতারণা করছ? কারো ক্ষতি করছ? তাহলে কেন কষ্ট পাবে?" আমি অবাক হয়ে তাকালাম মৌরীর দিকে। "আসলে লোকে কি বলবে,এটা ভেবে?" মৌরী বলছে, " তুমি যখন চাকরির জন্য ঘুরে ঘুরে জুতার তলি খুলে ফেলেছিলে, লোকে কি জুতা কিনে দিয়েছিল?" "তোমার বাসায় কি বলবে?" "আমি যা বলি তাই বলবে। আমি যদি মুখ গোমড়া করে থাকি তারাও থাকবে। আর যদি খুশি থাকি তারাও থাকবে" " তুমি শিউর?" "অবশ্যই, শুধু তুমি নিজে কনফিডেন্ট থাকলেই হল, আমি চাই তুমি গর্ব ভরে নিজের পরিচয় দাও" এরপর অনেকক্ষণ কোন কথা নেই।মৌরীই নীরবতা ভাংলো। "আচ্ছা,আমাদের বাবু স্কুলে নেয়ার জন্যও কি তোমাকে টাকা দিতে হবে?" নিয়ন আলোয় রিকশায় বসে আছি৷ পাশে পৃথিবীর সবচেয়ে দারুণ মেয়ে। সে রূপবতী কিনা আমি জানিনা,আমার জানার দরকারও নেই। সে যে আমার পাশে আছে এই সৌভাগ্যের জন্য আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। জীবনটা কল্পনার মত সুন্দর হয়না বলে আপনারা আফসোস করেন।কিন্তু জীবনকে কল্পনার মত সাজাতে আপনার দৃষ্টিভংগীর ছোট্ট পরিবর্তন ই যথেষ্ট। গল্পঃ লাইনম্যান লেখাঃ সুলতানা জহুরা আফরিন কুমু 

 
 
 

Comments


Single Post: Blog_Single_Post_Widget

Follow

  • Facebook
  • facebook
  • twitter
  • linkedin

©2017 by Health and LifeStyle.  Proudly created with Wix.com

bottom of page